নারী স্বাতন্ত্র্যবোধ......
অনেককাল অাগে বাংলার প্রথাবিরোধী লেখক ড: হুমায়ন অাজাদ বলেছিলেন,"এদেশে লাইব্রেরীর তুলনায় পার্লারের সংখ্যা দেখলেই বোঝা যায় ;জাতি হিসেবে অামরা কতটা পিছিয়ে"
কেন জানি বর্তমানেও কথাটার যৌক্তিক প্রাসন্গিকতা খুজে পাই! নারীর সুদীর্ঘকালের অবহেলিত জীবনাচার, মানসিক দ্বাসত্বের পংকিল অাবর্তের অবসান cঘটিয়ে নারী স্বাধীনতা, নারী ক্ষমতায়নের যুগে এখনও কেন সমাজে মেয়েদের ব্যাক্তিস্বাতন্ত্যবোধের অভাব প্রকট?
যখন মেয়েদের জন্য সবকিছু ছিল............ না! সবকিছুর জন্য মেয়েরা ছিল......না!নারীরা ছিল দ্বাসত্বের শিকলে বন্দী।
মেয়েদের সেই অচলাতয়নের যুগেও তো বেগম রোকেয়ার মত সাহসী লেখক মেয়েদের ঘরের বাইরে বেরুনোর সাহস দেখিয়েছেন।বোঝাতে চেয়েছেন নারীর ব্যাক্তিস্বত্বার উপলব্দি।
কিন্তু বর্তমানে মেয়েদের সৌন্দর্য প্রদর্শনের অসুস্থ প্রতিযোগিতা দেখলে (অবশ্য সবাই না, ব্যাতিক্রম সব সমাজে অাছে) মনে হয় নারী স্বাধীনতা, নারীর ক্ষমতায়নের বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটলেও নারী/ মেয়ে পুরাতন দ্বাসত্বের শেকল ভেংগে মহা সমারোহে নতুন শেকলে বন্দী। শুধু শেকলটাই নতুন, দ্বাসত্ব সেই মানসিকতার।
যে মেয়ে নিজেকে একটু বেশি সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার জন্য, মেকাপের পুরু অাবরন দিয়ে নিজের অথেনটিক চেহারাটাকে পুরো বিবর্তন করে ফেলে ; সে নিজের অজান্তেই নিজের হীনমন্যতার পরিচয় দেয়।
যার মেকাপের স্তর যত পুরু, তার ব্যাক্তিত্ববোধ ততটাই কম (ব্যাক্তিগত উপলব্দি)।
কারন দৈহিক বা পোশাকীয় সৌন্দর্যের মানদন্ডে কখনই একটা মেয়েকে সুন্দর বলা যায় না!বলা যায় না, নারীর ক্ষমতায়নের প্রকৃত মুর্ত প্রতীক! অাসল সৌন্দর্যটা মানসিক এবং অাত্বিক!
যে মেয়ে নিজের ব্যাক্তিস্বত্বায় বিশ্বাসী হয়ে,অাত্বিক সৌন্দর্যের উন্নয়নে মানসিক সক্ষমতায় বিশ্বাসী, সে কখনই ওভারড্রেসে সজ্জিত হবেনা।
অামাদের সামাজিকতা,পারিপ্বার্শিকতা, পশ্চিমা সংস্কৃতির অন্ধ অনুকরন,স্যোশাল মিডিয়ার অপব্যাবহার এই অবস্থার জন্য বহুলাংশে দায়ী। যেখানে প্রতিনিয়ত নারীকে ভোগপন্য হিসেবে উপস্থাপন করা হয়।অামাদের চলচিত্রের নায়িকাদের বোঝানো হয়,তোমরা নায়িকা......... শুটিং এর প্রথম দিন থেকেই তার সাথে সেভাবেই নায়িকাসুলভ অাচরন করা হয়।সেকারনে বর্তমানের নায়িকারা কোনদিনই নায়িকা এবং অভিনেত্রীর পার্থ্যকটা বুঝতে পারেননা। নায়িকা হয়েই থেকে যান,অভিনেত্রী অার হয়ে উঠা হয় না। সেকারনে নারীর অন্যতম প্রতিনিধিত্বের জায়গায় থেকেও সেইসব নায়িকারা নিজেদের গড্ডালিকা প্রবাহে ভাসিয়ে দিয়ে সিনেমায় একের পর এক ভুল বার্তা দিয়ে যায়। অংশ নেন নারকীয় বিদঘুটে সব অাইটেম সং এ............যার প্রভাব পড়ে সমাজে। নতুন প্রজন্মের মেয়েরা অাক্রান্ত হয়ে সেটাকেই অাইডল মনে করে অনুকরন করার চেষ্টা করে। শুরু হয় সভ্যতার সংকট!
যারা মেয়েদের ঘরে অাটকে রাখতে চান, সেটা যেমন ঠিক না।তেমনি তথাকথিত প্রগতিশীল বুদ্ধীজীবী যারা নারী স্বাধীনতার কথা বলে, উগ্র চলাফেরায় সায় দেয় তারাও অাদর্শিক নারীবাদী নন।
নিজস্ব ইতিহাস,ঐতিহ্য,উথান ও সাংস্কৃতিক পরিমন্ডল না জেনে ও নিজেদের অাত্বমর্যাদা, ব্যাক্তিস্বাতন্র্যবোধের বিকাশ না ঘটিয়ে সংস্কৃতির অসুস্থ প্রতিযোগিতায় নারীর মর্যাদা পরিপুর্ন হবে না।
লেখক :- অাবদুর রহমান
(শিক্ষানবীশ অাইনজীবী)
জেলা ও দায়রা জজ আদালত, মুন্সীগঞ্জ।
Comments
Post a Comment